সাবধান! রুপচাঁদা মাছের নামে বিক্রি করা হচ্ছে বিষাক্ত পিরানহা মাছ!
আমাদের দেশের সহজ সরল মানুষদের বোকা বানিয়ে, রুপচাঁদা মাছের নামে বিক্রি করা হচ্ছে বিষাক্ত পিরানহা মাছ, এই মাছ শুধু বাংলাদেশ নয়-পুরো বিশ্বে নিষিদ্ধ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে এই মাছ খেলে ক্যান্সার সহ বিভিন্ন কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। নিজে সচেতন হোন এবং অন্যকে সচেতন করুন।
এই মাছ বাজারে বা অন্য কোথায় কেউ বিক্রি করলে বা দেখলে প্রশাসনকে জানাবেন যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
মনে রাখবেন পিরানহা বিক্রি করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।
চলুন একনজরে পিরানহা সম্পর্কে জেনে নেই:
পিরানহা
ইংরেজি : piranha, piraña
Characidae গোত্রের এক প্রকার মিষ্টি পানির মাছের সাধারণ নাম। এদের আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। ভেনিজুয়েলাতে এদেরকে বলা হয় কারিবেস (caribes)। তীক্ষ্ণ দাঁত যুক্ত রাক্ষুসে মাছ হিসাবে এদের কুখ্যাতি আছে।
সাধারণত পিরানহা পাওয়া যায় দক্ষিণ আমেরিকার ওরিনকো, আমাজান সাও ফ্রান্সিসকো নদীর অববাহিকায় এদের সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। যদিও শীতল পানিতে এরা বাঁচে না, তারপরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইনেবাগো এবং উইসকোনসিন হ্রদেও এই মাছ দেখা পাওয়া যায়
এদের কিছু প্রজাতি এ্যাকুইরিয়ামে পালা হয়। বিভিন্ন সৌখিন মৎস্য প্রেমিকের দ্বারা এই মাছ পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন বাংলাদেশের কাপ্তাই হ্রদ এবং অন্যান্য জলাশয়ে এই মাছ কিছু কিছু ধরা পঅড়ছে। সম্প্রতি চীনের লিজিয়াং নদীতে এই মাছ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে অসৎ মৎস্য ব্যবসায়ী থাই রূপচাঁদা নামে এই মাছ বাজারে বিক্রয় করে থাকে। বাংলাদেশে এই মাছের চাষ বা বিক্রয় নিষিদ্ধ।
সাধারণত Serrasalminae উপগোত্রের পাঁচটি গণের মাছকে পিরানহা নামে অভিহিত করা হয়। এই গণগুলো হলো— Catoprion, Pristobrycon, Pygocentrus, Pygopristis, Serrasalmus।
এর অপর গণ Megapiranha-এর প্রজাতিগুলো— ৮০ লক্ষ বৎসর থেকে ১ কোটি বৎসর আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই মাছগুলো বসবাস করতো সেই সময়ের আর্জেন্টিনা অঞ্চলে। এই প্রজাতিগুলো লম্বায় প্রায় ১ মিটার হতো। এই বিচারে এরা ছিল আধুনিক পিরানহার প্রায় ৪গুণ। এর প্রিম্যাক্সিলা এবং দাঁতের জীবাশ্ম থেকে বিজ্ঞানীরা এরূপ ধারণ করেছেন। ধারণা করা হয়, বিলুপ্ত এই প্রজাতিগুলো আধুনিক পিরানহার একটি মধ্যবর্তী দশার মাছ ছিল।
বর্তমানে যে সকল প্রজাতির পিরানহা দেখা যায়, সেগুলোর প্রকৃত সংখ্যা যথার্থরূপে উপস্থাপন করাটা মুশকিল। কারণ এর নতুন নতুন প্রজাতি এখনো আবিস্কৃত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩০ প্রকার পিরানহা শনাক্ত করা হয়েছ। ধারণা করা হচ্ছে শেষ পর্যন্ত এর প্রজাতির সংখ্যা ৬০ এর বেশিও হতে পারে।
প্রজাতিভেদে পিরানহার দৈহিক আকার নানা রকমের হয়ে থাকে। সাধারণত লম্বায় ১৪-২৬ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। তবে সর্বোচ্চ ৪৩ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের পিরানহাও দেখা গেছে। এদের ভিতর Pristobrycon, Pygocentrus, Pygopristis, Serrasalmus গণের পিরানহাকে দাঁতের বিচারে সহজেই শনাক্ত করা যায়। এই সকল গণের পিরানহাগুলোর উভয় চোয়ালের এক সারিতে সুতীক্ষ্ণ দাঁত থাকে। এই দাঁতগুলো দৃঢ়ভাবে small cusps-এর মাধ্যমে চোয়ালের সাথে যুক্ত থাকে। এরা এই দাঁতের সাহায্যে লক্ষ্যবস্তুতে দ্রুত আঘাত হানতে পারে। এর বাইরে কিছু সুতীক্ষ্ণ রেজরের মতো ধারালো প্রান্তযুক্ত দাঁত থাকে। এগুলো ত্রিকোণাকার এবং অগ্রভাগ সুচালো থাকে। প্রথাগতভাবে Catoprion গণের মাছকে যথার্থ পিরানহা বলা হয় না। কারণ এই পিরানহার দাঁত থাকে দুই সারিতে। এছাড়া উপরের চোয়ালের গড়নও অন্যান্য চারটি গণের পিরাহানর মতো নয়। এরা এককভাবে বা দলবদ্ধভাবে আক্রমণ করে। অন্যান্য মাংশাসী প্রাণীদের মতো এরা শিকারকে হত্যা করে খায় না। বরং খেতে খেতে শিকারকে হত্যা করে।
রাক্ষুসে বা ভয়ঙ্কর পিরানহা বলতে Pygocentrus গণের প্রজাতিগুলোকে বুঝায়। এই তালিকায় সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পিরানহা বলতে বুঝায় Pygocentrus cariba এবং Pygocentrus nattereri-কে। আর বড় আকারের Pygocentrus piraya প্রজাতিটিকে মানুষের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক পিরানহা হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
গণভেদে এই মাছের প্রজাতিগুলো হলো—
Pristobrycon Pristobrycon aureus
Pristobrycon calmoni
Pristobrycon careospinus
Pristobrycon maculipinnis
Pristobrycon striolatus
Pygocentrus Pygocentrus cariba
Pygocentrus nattereri
Pygocentrus palometa
Pygocentrus piraya
Pygopristis Pygopristis denticulata
Serrasalmus Serrasalmus altispinis
Serrasalmus altuvei
Serrasalmus auriventris
Serrasalmus brandtii
Serrasalmus compressus
Serrasalmus eigenmanni
Serrasalmus elongatus
Serrasalmus emarginatus
Serrasalmus geryi
Serrasalmus gibbus
Serrasalmus gouldingi
Serrasalmus hastatus
Serrasalmus hollandi
Serrasalmus humeralis
Serrasalmus irritans
Serrasalmus maculatus
Serrasalmus manueli
Serrasalmus marginatus
Serrasalmus medinai
Serrasalmus nalseni
Serrasalmus neveriensis
Serrasalmus nigricans
Serrasalmus nigricauda
Serrasalmus odyssei
Serrasalmus rhombeus
Serrasalmus sanchezi
Serrasalmus scotopterus
Serrasalmus serrulatus
Serrasalmus spilopleura
Serrasalmus stagnatilis
বাংলাদেশে কিছু অসৎ মৎস ব্যবসায়ী থাই রূপচাঁদা নামে এই মাছ বাজারে বিক্রয় করে। কিন্তু ক্রেতারা একটু পরখ করে নিলেই এই জাতীয় প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে পারেন। উভয় মাছের ভিতরে মূল পার্থক্যগুলো হলো—
রূপচাঁদা পিরানহা
দাঁত থাকে না দাঁত থাকে
কানকুয়া নেই কানকুয়া আছে
এডিপোজ পাখনা এডিপোজ পাখনা আছে
সূত্র :
http://en.wikipedia.org/wiki/Piranha
কোন মন্তব্য নেই